টাঙ্গাইল প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৪:৪৫ পিএম
বেহাল মাঠে নেই খেলাধুলার কোনো পরিবেশ। সম্প্রতি ভূঞাপুরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের তোলা ছবি। প্রবা ফটো
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। উপজেলার শিয়ালকোল এলাকায় অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ পাঁচ বছর আগে সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত এক দিনের জন্যও মাঠে গড়ায়নি কোনো খেলা। তবে নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে বসছে গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র কেনাবেচার হাট। ফলে কোনো ধরনের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার সুযোগ মিলছে না স্থানীয় তরুণ ও কিশোরদের।
অপরদিকে, প্রতিনিয়ত হাট বসায় অনেক আগেই নষ্ট হয়ে পড়েছে খেলার পরিবেশ। বেহাল মাঠে এখন মেলে বর্জ্যের গন্ধ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলেন, হাট বসিয়ে নষ্ট হয়ে পড়া মাঠটি খেলাধুলার উপযোগী করতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সময়ের ব্যবধানে স্টেডিয়ামটি এখন পরিত্যক্ত স্থাপনায় পরিণত হচ্ছে।
সরেজমিনে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম ঘুরে দেখা যায়, খেলার মাঠজুড়ে খানাখন্দে ভরা, মাঠের চারিদিকে বসানো গ্যালারি বেঞ্চগুলোতে ময়লা-আবর্জনা আগাছায় ভরপুর, বৃষ্টির পানিতে মাঠের মাটি ও প্যালাসাইডিং ধসে গেছে। চরানো হয় গরু-ছাগল। বর্জ্যে মাঠের সৌন্দর্য নষ্ট, ভবনের আস্তরণ খসে পড়ছে। পাবলিক টয়লেট ভবন ও গোলপোস্টের বেহাল দশা।
স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম বলেন, সরকার লাখ লাখ টাকা খরচ করে স্টেডিয়াম তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু এই মাঠে আজ পর্যন্ত কোনো ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়নি। নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা হলে এই এলাকা থেকে ভালো খেলোয়াড় তৈরি হবে। তরুণ সমাজের ছেলেমেয়েরা মোবাইলের দিকে আকৃষ্ট হবে না। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ ও জোর দাবি জানাচ্ছি। নিয়মিত খেলাধুলার আয়োজন করা হোক।
স্থানীয় খেলোয়াড় লোকমান তালুকদারসহ অনকেই বলেন, নির্মাণের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় স্টেডিয়ামটি পড়ে রয়েছে। সপ্তাহে প্রতি শনিবার বসে গরু-ছাগলের হাট। মাঠটিতে খেলাধুলার কোনো পরিবেশ নেই। যার ফলে নির্মাণের পর থেকে এক দিনও কোনো খেলাধুলা হয়নি এই মাঠে। অথচ কর্তৃপক্ষ অন্য বিদ্যালয়ের মাঠ ব্যবহার করে খেলাধুলার আয়োজন করে। তাহলে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই স্টেডিয়াম কেন?
এদিকে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ভূঞাপুর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় এই স্টেডিয়ামে। এ সময় উপস্থিত একাধিক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভূঞাপুরে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম রয়েছে জানতাম না। এই মাঠে খেলাধুলার পরিবেশ নেই। মাঠটি খেলাধুলার উপযোগী করে স্টেডিয়ামে সকল খেলাধুলা আয়োজনের দাবি জানাচ্ছি।
উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রতন বলেন, শিয়ালকোল হাটের পাশে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের পর থেকে স্টেডিয়াম নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এই স্টেডিয়ামে খেলাধুলার কোনো পরিবেশ নেই। মাঠ ও চারপাশের পরিবেশ একেবারেই নোংরা হয়ে আছে। স্টেডিয়ামটি গরু-ছাগলের হাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি একাধিকবার জানিয়েও কোনো সুফল মেলেনি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, স্টেডিয়ামের বিষয়ে জেনে বিস্তারিত জানানো হবে। না জেনে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে টেন্ডার হওয়ার পর শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ পায় ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আকতার এন্টারপ্রাইজ এবং ফোর সাইট কোম্পানি নামে দুটি জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি। ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামটি ২০১৯ সালে নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।